পূর্ববর্তী মামলার রায় এ পর্যন্ত ১৪৫টি। যেমনঃ-
গ্রাম আদালতের মাধ্যমে দরিদ্র অসহায় ইমান আলী ফিরে পায় ন্যায় বিচার।
সারাংশঃ-
কিশোরগঞ্জ জেলার ঐতিহ্যবাহী উপজেলা হোসেনপুর। হোসেনপুরের একটি সুপরিচিত ইউনিয়ন গোবিন্দপুর। গোবিন্দপুর ইউনিয়নের লাকুহাটি গ্রামের দরিদ্র জনব আলীর অসহায় দরিদ্র ছেলে ইমান আলীর পরিবারে জন্ম নেয় ৩ ছেলে ১ মেয়ে। সহজ সরল ইমান আলী পরের জমি বর্গাচাষ করে এবং মানুষের ক্ষেতে খামারে কাজ করে সংসার চালায়। কোন রকম দিন কাটে ইমান আলীর প্রতিবাদী তোরাব আলী অর্থনৈতিক ভাবে সচ্ছল এবং অসহায় মানুষদের এবং প্রতিবেশীদের উপর অত্যচার করাই তার স্বভাব। তেমনি প্রতিবেশী তোরাব আলী প্রতিবেশী ইমান আলীকে দীর্ঘ দিন যাবৎ অত্যাচার করিয়া আসিতেছে।
পক্ষদ্বয়ের পরিচিতিঃ-
আবেদনকারীঃ-ইমান আলী, পিতাঃ জনব আলী, মাতাঃ রাবিয়া, গ্রামঃ লাকুহাটি, পোঃ গাংগাটিয়া, থানাঃ হোসেনপুর, জেলাঃ কিশোরগঞ্জ। বয়সঃ ৫০, পারিবারিক অবস্থাঃ ইমান আলীর ৩ ছেলে ১ মেয়ে। তার আয়ের পথ পরের জমি বর্গাচাষ করে সংসার চালায়। বাড়ীতে একটি টিনের ঘর আছে।
প্রতিবাদীঃ ১. তোরাব আলী, পিতাঃ মৃতঃ আমীর হোসেন, মাতাঃ মরাজী খাতুন, ২. হেলেনা, স্বামীঃ তোরাব আলী, মাতাঃ আম্বিয়া, ৩. কামরুল, পিতাঃ তোরাব আলী, মাতাঃ হেলেনা সর্ব সাং লাখুহাটি, পোঃ গাংগাটিয়া, থানাঃ হোসেনপুর, জেলাঃ কিশোরগঞ্জ।পারিবারিক অবস্থাঃ তোরাব আলীর ৩ ছেলে কোন মেয়ে নেই। পেশায় ছেলেরা চাকুরী করে ও তোরাব আলী কৃষিকাজ করে। বয়সঃ ৪৫।
পারিবারিক সামাজিক অবস্থাঃ-
ইমান আলী পরের জমি বর্গাচাষ করে কোন রকম সংসার চালায়। সহজ সরল গরীব চাষী বলে সমাজে পরিচিত। অপর দিকে তোরাব আলীর নিজের জমি চাষাবাদ করে এবং পাশাপাশিসে ব্যবসা ও করে।ঝগড়াটে লোক হিসাবে সমাজে পরিচিত।
বিরোধের প্রেক্ষাপটঃ- প্রতিবাদী তোরাব আলীর ছেলে কামরুল আবেদনকারী ইমান আলীর ভাতিজা জালাল মিয়ার সাথে ঢাকায় রাজ মেস্ত্রীর কাজ করে। সেই কাজ করার পারিশ্রমিকনিয়েবাড়ীতে এসে কামরুল জালাল মিয়ার সাথে ঝগড়া করে। তখন আবেদনকারী ইমান আলী বলে ঝগড়া না করে আলাপ আলোচনা কর কার কাছে কে টাকা পাবে। এ কথা বলার সাথে সাথে প্রতিবাদী জালাল মিয়া ইমান আলীকে মারতে আসে পরক্ষনেই তোরাব আলী তার স্ত্রী হেলেনা এবং ছেলে কামরুল দা, লাঠি, কোদাল, শাবল ইত্যাদি নিয়ে ইমান আলী ও তার স্ত্রীকে মারধোর করে মারাত্মক জখম করে এবং মেরে ফেলার জন্য হুমকি দেয়। প্রতিবাদীগণের দা, শাবল, কোদাল এগুলো মারামাড়ির সময় আবেদনকারী ইমান আলী মার খেয়ে এগুলো স্বাক্ষীপ্রমানের জন্য সাক্ষীর মাধ্যমে রেখে দেয়।
গ্রাম আদালতের আগমনঃ
সালিশ বিচারের জন্য ইমান আলী সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে মেম্বার মিরাশ উদ্দীনের কাছ যায়। মিরাশ উদ্দীন মেম্বার তাকে গ্রাম আদালতে আবেদন করার জন্য পরামর্শ দেয়।
মামলার বিবরণঃ-
বিগত ১১/০৯/২০১২ইং তারিখে ইমান আলী গোবিন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে আসে এবং তোরাব আলী, কামরুল, হেলেনাকে প্রতিবাদী করে একটি লিখিত আবেদনপত্র জমা দেন, মামলায় ফি ২ (দুই) টাকা প্রদান করেন। মামলা নং-৫২/২০১২, দাখিলের তারিখঃ- ১১/০৯/২০১২ইং তারিখে ইমান আলী গ্রাম আদালতে একটি ফৌজদারী মামলা করেন। ইউপি চেয়ারম্যান জনাব আবুল কাসেম (রতন) মামলাটি যাচাই করেন এবং রেজিভূক্ত করে প্রতিবাদীকে সসমন প্রদান করেত বলেন। ২৩/০৯/২০১২ইং তারিখে সকাল ১০.০০টায় প্রতিবাদী গনকে হাজির হবার জন্য সমন প্রদান করেন গ্রাম পুলিশ তাহের মিয়া।
আদালতের বিচার প্রক্রিয়া পদ্ধতিঃ-
২৩/০৯/২০১২ইং তারিখ সকাল ১০.০০টায় বাদী ও প্রতিবাদীকে গোবিন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদে হাজির। ইউনিয়ন পরিষদের হাজিরা সীটে হাজিরাগ্রহণ কোট সহকারী নারিদা বেগম। ২৩/০৯/২০১২ইং তারিখে বাদী ও প্রতিবাদীদেরকে প্রতিনিধি মনোনয়নের নির্দেশ দেন। আগামী ০১/১০/২০১২ইং তারিখের মধ্যে নিদের্শ দেন ইউপি চেয়ারম্যান। উক্ত ০১/১০/২০১২ইং তারিখ অনুযায়ী আবেদনকারী তার পক্ষের অত্র ইউনিয়নের ০৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার জনাব মিরাশ উদ্দিনকে ও লাখুহাটি গ্রামের জনাব ছালমা আক্তারকে (গন্যমান্য), প্রতিবাদী ও অত্র ইউনিয়নের ১,২,৩নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার জনবা পারভীন আক্তারকে ও লাখুহাটি গ্রামের (গন্যমান্য) জনাব আবদুর রাশিদকে প্রতিনিধি হিসাবে মনোনয়ন দেন। আবেদনকারী ও প্রতিনিধি ও ইউপি চেয়ারম্যানের সমন্বয়ে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট গ্রাম আদালত গঠিত হয়। মামলার তারিখ ০৭/১০/২০১২ইং তারিখে থাকলে প্রশাসনিক কাজে ব্যাস্ত থাকায় চেয়ারম্যান ০৯/১০/২০১২ইং তারিখে ধার্য ছিল। প্রতিবাদীগণ নির্ধারিত তারিখে কোন আপত্তি দাখিল করেননী।
গ্রাম আদালতের শুনানীর বিবরণঃ
০৯/১০/২০১২ইং তারিখে গ্রাম আদালতের অধিবেশনের দিন ধার্য ছিল।
ধার্য তারিখে আবেদনকারী ও প্রতিবাদীগণ হাজির এবং তাদের সাক্ষীগণ উপস্থিত। গ্রাম আদালতের পর প্রতিনিধিগণ উপস্থিত। বিচারগণ উভয়ের কথা শুনেন এবং তাদের জনানবন্দীর সারাংশ লিখে রাখেন। উভয়ের জবানবন্দী এবং সাক্ষীর জবানবন্দী ও স্থানীয় প্রতিনিধিগনের আলোচনায় প্রতিবাদীর উপর আয়োজিত আবেদনকারীর অভিযোগ প্রমানিত। আবেদনকারীর পক্ষে পক্ষে মামলাটি ডিগ্রীহয়। আদালত ৭ দিনের মধ্য ক্ষতিপূরণ ও ঔষদ খরচ বাবদ ২,০০০/- (দুই হাজার টাকা) প্রদানের নির্দেশ দেন। অদ্য হতে ৭ দিনের মধ্যে আদালতের ধার্যকৃত টাকা দিতে ব্যর্থ হলে আবদনকারী তার ডিগ্রীকৃত টাকা আইনের বর্ণিত পঞ্চায় আদায় নিতে পারবেন। সিন্ধান্ত হওয়ার ৭ দিনের মধ্যে ১৬/১০/২০১২ইং তারিখে আদালতের ধার্যকৃত পাওনা প্রতিবাদীগণ পরিশোধ করেন। আবেদনকারী তা বুঝে নেন।
মামলায় ফলাফল ও প্রতিকারঃ-
অত্র মামলাটি সিন্ধান্ত কা-তরফা সূত্রে গ্রাম আদালতের চেযারম্যান কর্তৃক
প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে ১৬/১০/২০১২ইং তারিখের বিবাদী ও আবেদনকারীকে তার ডিগ্রীকৃত টাকা বুঝিয়ে টাকা বুঝিয়ে দেন। আবেদনকারী টাকা বুঝিয়ে পেয়ে রেজিষ্ট্রারে স্বাক্ষর করেন।
এক্ষদ্বয়ের অনুভূতিঃ-
জানা যায় আবেদকারী তার ক্ষতিপূরনের অর্থ পাওয়ার মাধ্যমে ন্যায় বিচায় পেয়ে খুব খুশি হন। আবেদনকারীকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন এত অল্প সময়ে এবং অল্প খরচে মামলা নিষ্পত্তি হয় তাহা আমার জানা ছিলনা। হয় তাহা আমার জানা ছিলনা। থানায় গেলে অনেক পয়সা খরচ হত এবং দীর্ঘ সময় লেগে যেত।তাই ইমান আলী বলে আমি মনে করি আমার মত হতদরিদ্র লোকের জন্য গ্রাম আদালতের বিচার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবাদীকেজিজ্ঞাসা করলে তারা বলেন আমরা মনে করেছি অনেক দীর্ঘ সময় লেগে যাবে ইমান আলী ক্লান্ত হয়ে যাবে আসরে আমরাও বুঝতাম না। দরিদ্র লোকের জন্যই গ্রিম আদালত।
মামলার ফলাফল পক্ষদ্বয়ের পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে কি উপকার পেয়েছেঃ-
আবেদনকারী তার ক্ষতিপূরনের টাকা পেয়ে তার সংসারের ক্ষতি গ্রস্ততা পূরর্ণ হয়েছে এবং সামাজিক ভাবে আরো মর্যাদা বেড়েছে ন্যায় বিচারের মাধ্যমে।
প্রতিবাদী ও সামাজিকভাবে বুঝতে পেরেছে কারও প্রতি অনাচার করলে অর্থনৈতিক সামাজিক হীনতা মানুষের ভূল ভেঙ্গে দেয়।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস